“আমার নাম সানজিদা হক সন্ধি। টাংগাইল জেলার নাগরপুর থানার একটি গ্রামে থাকতাম আমরা। ২০১৪ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী আমার কোল আলো করে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমার পরিবারের সবাই তখন খুব খুশি। কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের হাসি আনন্দ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। যখন দেখলাম ছেলের পায়ের অবস্থান ভেতরের দিকে বাঁকানো। তখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তারপর ছেলের বাবা ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসলেন। পরিবারের সবাই আমাকে সাহস দিলো যে পায়ের পাতা বাঁকা ভালো হয়। আমি মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পরেছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী, আমার মা বাবা আর ভাইয়েরা আমাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে সাহস দিয়েছেন। সবাই আমাকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করেছে যাতে আমি ভেঙ্গে না পরি।
প্রথমে আমি ঢাকায় একটি হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে প্রথমবার প্লাস্টার করেছিলাম। কিন্তু বাড়ী থেকে ঢাকা অনেক দূরে হওয়ায়, আমার স্বামী খোঁজ করলো আমাদের এলাকার কাছে কোথাও এর চিকিৎসা করানো যাবে কি না। তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে টাংগাইল সদরে ওয়াক ফর লাইফ এর ক্লিনিকে ক্লাবফুট (মুগুর পা) – এর চিকিৎসা করানো হয়। আর দেরি না করে সেখানে নিয়ে গিয়ে আমি আমার ছেলে (সানজিদ ইসলাম শাফি) কে চিকিৎসা নিতে শুরু করলাম। তারপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল পেতে শুরু করলাম। চিকিৎসক দলের প্রচেষ্টা, আমার আর আমার পরিবারের সকলের সম্মিলিত পরিশ্রমে আমার ছেলে ধীরে ধীরে ভালো হতে লাগলো।
তারপর থেকে আমি নিয়ম মাফিক জুতা পরাতে শুরু করলাম। জুতা পরানোর পর সব বাবুই একটু কান্না করে। আমার বাড়ির আশেপাশের চাচিরা বলতো, ‘‘তুই কেমন, তোর কি ছেলের জন্য মায়া হয় না? ছেলেটার পা তো ভালোই হয়ে গেছে আর জুতা পরানোর কি দরকার, শুধু শুধু ছেলেটাকে কান্না করাস। আমি বলতাম, “আমার ছেলের জন্য আমার মায়া হয় বলেই আমি জুতা পরাই, আমি এখন ওর কান্না সহ্য করতে পারবো। কিন্তু ওর পা ভালো না হলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না। আর ডাক্তাররা কখনও রোগীদের খারাপ চায় না। তারা ভালো বোঝে বলেই এই নিয়ম দিয়েছে।” মোটকথা যে যাই বলুক আমি আর আমার পরিবার আমাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। যেভাবে যে নিয়মে জুতা পরাতে হবে, আমি ঠিক সেভাবেই জুতা পরাতাম। তারপর ছেলের জুতার সময় কমে আসলো এবং এভাবেই দিন চলতে লাগলো।
আর আমি এখন ছেলের পা নিয়েও খুব খুশি সে এখন দৌড়াতে পারে, খেলতে পারে, সুস্থ বাচ্চাদের মতই সে সব কিছু করতে পারে। এখন যারা জানে না যে ওর পা বাঁকা হয়েছিলো, তারা কিছু বুঝতেও পারে না। সর্বোপরি ও এখন একটি সুস্থ বাচ্চা। উপরওয়ালার কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া। আর ওয়াক ফর লাইফ এর প্রতিও আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। তারা না থাকলে হয়তো আমাদের প্রচেষ্টা সফল হতো না। যাদের প্রচেষ্টায় ক্লাবফুট শিশুগুলো ভালো হচ্ছে, তাদের প্রতি জানাই অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। আর একজন মা হিসেবে আমি চাই পৃথিবীর সকল মায়ের শিশুরাই সুস্থ আর সুন্দর জীবন যাপন করুক। কারণ আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ।”