সহিদের শৈশবের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো, যদি তার মা-বাবা অসীম ধৈর্য আর সাহস দেখাতে না পারতেন। সকল সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আর কুসংস্কার একপাশে রেখে তারা তাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য চেষ্ঠা করেছেন। অবশেষে আজ তার সুফল পেয়েছেন। নিয়মিত চিকিৎসায় সহিদ এখন পায়ের পাতা বাঁকার প্রতিবন্ধকতা মুক্ত। কিন্তু গল্পটা শুরুতে এমন ছিলনা। সহিদের মায়ের কাছ থেকেই শোনা যাকঃ
“আমার গ্রামের বাড়ী বরিশাল বিভাগের দ্বীপ জেলা ভোলার এক নির্জন গ্রামে। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ে কি তাই ভালোভাবে বুঝতাম না। সাংসারিক কাজকর্মে দিন পেরিয়ে যাচ্ছিল স্বাভাবিক গতিতে। বছর না যেতে কোল জুরে ফুটফুটে বাচ্চা এলো। প্রথম সন্তান ছেলে শিশু দেখে পরিবারের সবাই খুব খুশী। বাড়ীতে শুরু হলো আনন্দ-উৎসব।
কিন্তু সেই আনন্দ বেশীক্ষণ রইলো না। হঠাৎ সবার নজর গেল বাচ্চার পায়ের দিকে। কারণ বাচ্চার পা দুটিই ভেতরের দিকে বাঁকানো। সকলে খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সবাই আমাকেই দোষারোপ করতে লাগলো। বলাবলি করতে লাগলো – আমি অন্যায় কাজ করেছি তাই আমার বাচ্চা এই রকম হয়েছে। এমনিতেই শরীর তখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি, তার মধ্যে এই অপবাদ। আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পরলাম। কি করবো বা বলবো বুঝে উঠতে পারছিলামনা কিছুতেই।
এভাবে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কয়েকদিন পার হলো। বাচ্চার নাম রাখা হলো সহিদ। একদিন আমি বাচ্চার বাবাকে সাহস করে বললাম একজন ভালো ডাক্তারের কাছে যেয়ে আমার সহিদকে দেখাতে। পরিবারের সম্মতি নিয়ে আমরা দুজনে বাচ্চাকে নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালের একজন শিশু ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তারের কাছে জানতে পারি আমার সহিদের জন্মগত পায়ের পাতা বাঁকা রোগকে মুগুর পা (ক্লাবফুট) বলে যা ধারাবাহিক চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। ভোলা সদর হাসপাতালেই ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকে জন্মগত পায়ের পাতা বাঁকার (মুগুর পা) চিকিৎসা করানো হয়। ডাক্তারের পরামর্শে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসি।
ওয়াক ফর লাইফের ধারাবাহিক চিকিৎসায় আমার সহিদ এখন আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতই হাঁটতে, দৌঁড়াতে এবং খেলাধূলা করতে পারে। অনেক ধন্যবাদ ওয়াক ফর লাইফকে।”