“প্রত্যেক দম্পতির ইচ্ছা থাকে তাদের উত্তরাধিকারী থাকুক। বর্তমানে শিবাংশু আমাদের প্রথম সন্তান। তৃতীয়বার গর্ভধারণের পর শিবাংশু জন্মগ্রহণ করে। পরপর দুইবার গ্রামের ডাক্তারের ভুলে ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুব হতাশ ছিলাম। এরপর ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত স্যারের সহধর্মিনী অধ্যাপক ডাঃ জয়শ্রী রায়-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়ে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় আমাদের ঘর আলোকিত করে শিবাংশু।
ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করানোয় ঝুঁকি থাকায় টেলিচিকিৎসার মাধ্যমে রাজশাহীর সিডিএম হাসপাতালে আমার স্ত্রী চিকিৎসাধীন ছিলো। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আনোয়ার হাবিব স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শিউলি জেসমিন ম্যামকে দিয়ে ২৭/১০/১৭ তারিখে সিডিএম হাসপাতালে সিজার অপারেশন করা হয়।
প্রথম পিতা হওয়ার রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। কিন্তু বাচ্চার দুই পা ক্লাবফুট হওয়ায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেদিন ছিল শুক্রবার, শিশু বিশেষজ্ঞ সানজিদা ম্যাম, ছানাউল হক স্যার এবং অর্থোপেডিক্সের বিভাগীয় প্রধান (রামেক) সম্মিলিতভাবে আমাকে জানালেন ওয়াক ফর লাইফ নামে রামেকে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ক্লাবফুট শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাকে সেখানে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। পরদিন অধ্যাপক বেলাল স্যারও ওয়াক ফর লাইফের কথা বললেন।
আমি তৃতীয় দিনের শিবাংশুকে নিয়ে সেখানে গেলাম। ওয়াক ফর লাইফ ক্লিনিক টিমের আন্তরিক ব্যবহারে অনেক মুগ্ধ হলাম। সেখানে দেখলাম আমার শিশুর মত অনেক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। অনেক শিশু চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক শৈশব ফিরে পেয়েছে। মনে সাহস পেলাম, ওয়াক ফর লাইফ ক্লিনিক টিমের ফিজিওথেরাপিস্ট জানালেন, শিশুর নাভী পরে শুকিয়ে গেলে অথবা বয়স ২১ দিন থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
তাদের পরামর্শ ও সেবা এবং আন্তরিকতায় আমাদের শিবাংশু বর্তমানে সুস্থ এবং স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা চলাফেরা করছে। তাদের পরামর্শ মত এখনো আমরা আমাদের বাবুর চিকিৎসা গ্রহণ করছি। বেঁচে থাকুক ওয়াক ফর লাইফ প্রতিষ্ঠান এবং দুঃখী পিতা-মাতার সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাক, স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশায় শিবাংশু-র পিতা-মাতা।”
– বিপুল কুমার সূত্রধর, সিনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংক এবং স্বপ্না রানী সরকার, সহকারী শিক্ষক, আনন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। (সম্পাদনা ব্যতীত)