সুমি আজ খুব খুশি কারণ তার ছেলে তাসিন এখন অন্য সকল স্বাভাবিক শিশুদের মত হেসে খেলে বেড়াতে পারে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে যখন তাসিন বাঁকানো পায়ের পাতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল তখন পরিবারের কেউই সুমিকে বা তার বাচ্চাকে খুশি মনে মেনে নিতে পারেনি। সবার মনেই এক অজানা আশংকা ভর করেছিলো।
স্বাভাবিকভাবেই শ্বশুরবাড়ির অনেকেই মন্তব্য করেছিল নিশ্চয়ই সুমির কোন ভুলের কারণেই বাচ্চা বাঁকা পায়ের পাতা নিয়ে জন্মেছে। সুমি যখন দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে এগিয়ে এল একজন আত্মীয় সম্পর্কে যিনি সুমির খালা। সেই খালা গাজীপুরের একটি হাসপাতালে চাকুরী করেন। চাকরীর সুবাদে তিনি ক্লাবফুট এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে জানতেন। তিনি অনেক ক্লাবফুট শিশুকেই সঠিক নিয়মে ধারাবাহিক চিকিৎসাগ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ হতে দেখেছেন। তিনিই সুমিকে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকের কথা বলেন এবং কালবিলম্ব না করে সুমি এবং তার সন্তান তাসিনকে নিয়ে চলে আসেন ক্লিনিকে।
৪০ দিন বয়সে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকে অন্তর্ভুক্ত হয় তাসিন। পরবর্তিতে তাসিনকে ধারাবাহিক চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলা হয়। খালার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আর সুমির হার না মানা মানসিকতার কল্যাণে তাসিন আজ সম্পূর্ণরূপে ক্লাবফুটের প্রতিবন্ধকতা মুক্ত।
কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশে আসেন ওয়াক ফর লাইফ (বাংলাদেশ ও মায়ানমার) – এ কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক ডাঃ পল ওয়েড (পডিয়াট্রিক সার্জন, অস্ট্রেলিয়া)। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। সেখানে উপস্থিত ক্লাবফুট শিশুদের চিকিৎসার অগ্রগতি দেখেন ও তাদের পিতামাতার সাথে কথা বলেন। সেদিন তাসিন তার মায়ের সাথে এসেছিলো ব্রেস জুতো পরিবর্তনের জন্য। তাসিনকে পর্যবেক্ষণ করেন ডাঃ পল ওয়েড এবং তার চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর এখন তাসিন’কে শুধু রাতে ব্রেস পরে ঘুমাতে হয়। অন্য সময় তাসিন ছুটোছুটি করে খেলে বেড়ায় সারা বাড়ি জুড়ে, বন্ধুদের সাথে বিদ্যালয়ে যায় এবং আর তা দেখে তাসিনের মা ও তার পরিবারের সবাই খুবই আনন্দিত।
উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালের ১৫ই এপ্রিল গাজীপুরে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয় এবং আজ অবধি ক্লিনিকটির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ করে ওয়াক ফর লাইফের ক্লিনিক তালিকা দেখুন।