ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগের, ২০১১ সালের। মোঃ ইব্রাহিম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং তার স্ত্রী হালিমা একজন গৃহিণী। বরিশাল বিভাগের দ্বীপ জেলা ভোলার এক গ্রামে ইব্রাহিমের পরিবারের বসবাস। পরিবারটি খুবই ধার্মিক ও রক্ষণশীল। এই পরিবারে প্রথম সন্তান হিসেবে হালিমার কোল আলো করে যখন মাহবুবার জন্ম হয় তখন পরিবারের সকলে খুবই আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘায়িত হওয়ার আগেই নতুন শিশুর দুই পায়ের পাতা বাঁকানো দেখে অনেকেই হতাশ হলেন। যেহেতু কন্যা শিশু তাই তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই তখন চিন্তাগ্রস্ত।
মাহবুবার শিক্ষক বাবা মোঃ ইব্রাহিমও কিছুটা শঙ্কিত হলেন। তবে মনোবল হারালেন না। তিনি দৃঢ়চিত্তে পরিবারের সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বুঝাতে সমর্থ হলেন যে, বাঁকানো পায়ের পাতার নিশ্চয় চিকিৎসা করানো সম্ভব। পরিবারের কাছে তিনি মানসিক সমর্থন চাইলেন। সবাই মাহবুবার চিকিৎসার কথা ভাবছিলেন। তারা সকলেই চাইছিলেন কালবিলম্ব না করেই দ্রুত সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
মাহবুবার মা হালিমা স্বামীর এই দৃঢ় মনোবল দেখে আশ্বস্ত হলেন। পরিবারের সকলকে তিনি এই পরিস্থিতে তার ও তার সন্তানের পাশে পেলেন। বুঝতে পারলেন, মাহবুবাকে কেউ বাঁকানো পায়ের পাতা নিয়ে জন্মানোয় অবহেলা করবেনা।
অনেক খোঁজখবর নেয়ার পর জানতে পারলেন ভোলা সদর হাসপাতালে অবস্থিত ওয়াক ফর লাইফের ক্লাবফুট ক্লিনিকে বাঁকানো পায়ের পাতার চিকিৎসা প্রদানের কথা। তবে ইব্রাহিমের গ্রামের বাড়ী হতে হাসপাতাল ছিল প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। এতে তিনি দমে যাননি। ২০১১ সালের ৬ই ডিসেম্বর, ১৯ দিন বয়সী মাহবুবাকে নিয়ে বাবা-মা দুজনেই চলে এসেছিলেন ওয়াক ফর লাইফের ক্লাবফুট ক্লিনিকে। সাথে মাহবুবার দাদীও আসতেন প্রায়।
প্রতিবার হাসপাতালে আসার সময় তাদের বেশ কিছু পথ পায়ে হেঁটে, তারপর নৌকায় করে এবং শেষে বাসযোগে আসতে হতো। তারপরও পরিবারটি মাহবুবার চিকিৎসা অব্যহত রেখেছিলেন। পনসেটি পদ্ধতিতে ক্লাবফুট চিকিৎসার সকল নিয়মাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করেছেন। এভাবে দিন, মাস আর বছর পেরিয়ে আজ ২০১৮ সাল। প্রায় ৭ বছরের দীর্ঘসময় পর মাহবুবা আজ বাঁকানো পায়ের পাতা প্রতিবন্ধকতা মুক্ত। ইব্রাহিমের পরিবারের সকলে আজ চিন্তামুক্ত কেননা তাদের মাহবুবার শৈশব আর আগামী হবে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার।